বার্তা ডেস্ক ০৭ সেপ্টেম্বার ২০২৫ ০৬:১৩ পি.এম
এখানকার দিনে যুদ্ধ কেবল গোলাবারুদ আর কামান দিয়ে সীমাবদ্ধ নয়। আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্র এখন অনেকটাই নির্ভর করছে প্রযুক্তি ও সাইবার শক্তির ওপর। এমনকি বিশ্বের সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান বা ফাইটার জেট–ও আর শুধু আকাশে আগ্রাসন চালানোর যন্ত্র নয়, এটি একধরনের উড়ন্ত কম্পিউটার। প্রশ্ন উঠছে— এই যুদ্ধবিমান কি হ্যাক করা সম্ভব?
ফাইটার জেটে প্রযুক্তির ব্যবহার
র্তমান প্রজন্মের যুদ্ধবিমান যেমন F-35, Rafale, Sukhoi Su-57, কিংবা J-20 – সবগুলোতেই রয়েছে অত্যাধুনিক অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যার সিস্টেম,এআই-নির্ভর সেন্সর, উন্নত যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ফ্লাই বাই ওয়্যার (Fly-by-wire) কন্ট্রোল সিস্টেম। এগুলোর অধিকাংশই কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সাইবার হামলার ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
হ্যাক করা কি আদৌ সম্ভব?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভব – তবে খুবই কঠিন।
সাধারণ ইন্টারনেটভিত্তিক ডিভাইসের মতো সহজলভ্যভাবে যুদ্ধবিমান হ্যাক করা যায় না। কারণ:
এগুলো সাধারণ ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত নয় (Air-gapped System)
প্রতিটি কমিউনিকেশন চ্যানেল থাকে উচ্চমানের এনক্রিপশনে সুরক্ষিত
সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারে থাকে একাধিক নিরাপত্তা স্তর
প্রতিটি দেশের সামরিক বাহিনী নিজস্বভাবে কাস্টমাইজড ওএস ও ফায়ারওয়াল ব্যবহার করে
তবে তা সত্ত্বেও থিওরিটিক্যালি কিংবা সীমিতভাবে যুদ্ধবিমান হ্যাক করা সম্ভব, বিশেষ করে যদি এর সফটওয়্যারে পূর্বেই ম্যালওয়্যার বা ব্যাকডোর প্রবেশ করানো হয়।
বিপজ্জনক নজির
২০১১ সালে ইরান দাবি করেছিল, তারা একটি মার্কিন RQ-170 ড্রোন হ্যাক করে সফলভাবে নামাতে পেরেছিল। যদিও এটি যুদ্ধবিমান ছিল না, তবে প্রযুক্তি অনুপ্রবেশের বাস্তব উদাহরণ।
চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে বহুবার অভিযোগ উঠেছে, তারা আমেরিকান বা ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ডিজাইন ডেটা চুরি করেছে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে।
নেভিগেশন ও সেন্সর বিভ্রান্ত করা
ডেটা চুরি বা সংকেত বিকৃত করা
উড়ন্ত অবস্থায় কন্ট্রোল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা
লঞ্চ কমান্ড বা অস্ত্র সিস্টেম নিষ্ক্রিয় করা
এই ধরনের হামলা হলে শুধু যুদ্ধ মিশনই ব্যর্থ হবে না, প্রাণহানির আশঙ্কাও তৈরি হতে পারে।
কীভাবে সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়?
বিভিন্ন দেশ তাদের ফাইটার জেট ও ডিফেন্স সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখতে নিচের কৌশলগুলো গ্রহণ করে—
নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট ও এনক্রিপশন পদ্ধতি পরিবর্তন
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সাইবার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
মডেলিং ও সিমুলেশনের মাধ্যমে হ্যাকিং পরীক্ষা
যুদ্ধকালীন সময়েও নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন রাখা (Offline Operation Mode)
যদিও যুদ্ধবিমান হ্যাক করা অত্যন্ত কঠিন ও জটিল, তবুও এটি অসম্ভব নয়। ভবিষ্যতের যুদ্ধে সাইবার আক্রমণ হতে পারে সবচেয়ে বড় হুমকি, যেখানে অস্ত্র ছাড়াই শত্রুর শক্তিকে অকার্যকর করে ফেলা সম্ভব। তাই আধুনিক যুদ্ধবিমানকে কেবল প্রযুক্তিনির্ভর নয়, প্রযুক্তি-নিরাপদ করাও এখন সময়ের দাবি।