বার্তা ডেস্ক ২৫ নভেম্বার ২০২৫ ০৬:৫১ পি.এম
প্রায় ১২ হাজার বছর পর হঠাৎ জেগে উঠেছে ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলে অবস্থিত হাইলি গুব্বি নামক একটি আগ্নেয়গিরি। গত রোববার (২৩ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে ওই অগ্ন্যুৎপাত।
ইথিওপিয়ার স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১২ হাজার বছরে হাইলি গুব্বি আগ্নেয়গিরি থেকে এটিই প্রথম অগ্নুৎপাতের ফলে ছাইয়ের আস্তরণে ঢেকে গেছে আশপাশের গ্রামগুলো। স্যাটেলাইট চিত্রেও একই ছবি দেখা গেছে। স্যাটলাইট থেকে পাওয়া চিত্রে লোহিত সাগরের ওপর ছাইয়ের মেঘ ভাসতে দেখা গেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কেউ হতাহত না হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে সতর্কতা বার্তা জারি করা হয়েছে। তাদের জানানো হয়েছে অগ্নুৎপাতের ফলে তৈরি হওয়া ছাই স্থানীয় পশুপালকদের জীবিকাকে প্রভাবিত করতে পারে।
'তুলুজ ভল্ক্যানিক অ্যাশ অ্যাডভাইজরি সেন্টার' থেকে জানানো হয়েছে, ছাইয়ের এই ঘন মেঘ ইয়েমেন, ওমান, ভারত এবং উত্তর পাকিস্তান পর্যন্ত পৌঁছেছে। তবে এর ফলে হতাহত বা বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, এই অগ্নুৎপাতের তৈরি হওয়া ওই ঘন ছাইয়ের মেঘ ভারতের আকাশপথে প্রবেশ করেছে। গুজরাত, দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চল, রাজস্থান এবং পাঞ্জাবে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে সোমবারই আগাম সতর্কতা জারি করা হয়।
ভারতের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা— ডাইরেক্টট জেনারল অব সিভিল এভিয়েশন বিমান সংস্থাগুলোর উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা জারি করে। সম্ভাব্য প্রভাবিত অঞ্চলকে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। সতর্কতামূলক পদক্ষেপের অংশ হিসাবে এয়ার ইন্ডিয়াসহ বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থা একাধিক ফ্লাইট বাতিল করেছে।
কেরালার কানুর থেকে আবুধাবিগামী ইন্ডিগোর একটি বিমানকে আহমেদাবাদে ডাইভার্ট করে দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
সুদূর ইথিওপিয়ার অগ্নুৎপাতের প্রভাব ভারতেও দেখা গেছে। অগ্নুৎপাতের ফলে সৃষ্ট ওই ছাইয়ের মেঘ ভারতের দিকে ধেয়ে আসছে বলে সোমবারই 'ইন্ডিয়া এমইটি স্কাই ওয়েদার'-এর তরফে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।
এক্স-এ হ্যান্ডেলে জানানো হয়, অগ্নুৎপাতের ফলে সৃষ্ট ‘হাইলি গুব্বি আগ্নেয়গিরি অঞ্চল থেকে ছাইয়ের মেঘ গুজরাত পর্যন্ত দেখা যেতে পারে। অগ্নুৎপাত বন্ধ হলেও বায়ুমণ্ডলে এই ছাইয়ের মেঘ উঠে এসেছে। এটি ঘণ্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার গতিতে উত্তর ভারতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘আকাশে ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার ফুট থেকে ৪৫ হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে এই ধোঁয়ার মেঘ যা মূলত আগ্নেয়গিরির ছাই, সালফার ডাই অক্সাইড এবং কিছু ছোট কাচ বা শিলা কণা নিয়ে গঠিত। এর ফলে আকাশ স্বাভাবিকের চেয়ে অন্ধকার দেখাতে পারে এবং বিমান ট্র্যাফিককে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে ফ্লাইট বিলম্বিত হতে পারে এবং যাত্রাও দীর্ঘ হতে পারে।’
ইন্ডিয়ান মেটেরিওলজিকাল ডিপার্টমেন্ট (আইএমডি)-র তরফে সোমবার জানানো হয় ভারতের দিকে ধেয়ে আসছে ওই ছাইয়ের মেঘ।
আইএমডি জানায়, ‘উচ্চ-স্তরের বাতাস ইথিওপিয়া থেকে আসা ছাইয়ের মেঘকে লোহিত সাগর পেরিয়ে ইয়েমেন, ওমান এবং আরব সাগরের উপর দিয়ে পশ্চিম ও উত্তর ভারতের দিকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে।’
'ইন্ডিয়া এমইটি স্কাই ওয়েদার'-এর পক্ষ থেকে জানানো হয় সোমবার রাতের মধ্যেই ভারতের গুজরাতে প্রবেশ করে অন্যান্য রাজ্যের দিয়ে অগ্রসর হবে ঘন ছাইয়ের মেঘ।
বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘এই ছাই মেঘ রাত ১০টার মধ্যে গুজরাতে (পশ্চিম অংশে) প্রবেশ করবে এবং রাজস্থান, উত্তর-পশ্চিম মহারাষ্ট্র, দিল্লি, হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবের দিকে অগ্রসর হবে। পরবর্তী কালে, এটি হিমালয় এবং অন্যান্য অঞ্চলেও প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে আকাশ স্বাভাবিকের চেয়ে ঝাপসা দেখাবে।’
‘ইন্ডিয়া এমইটি স্কাই ওয়েদার’-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ছাইয়ের মেঘের প্রভাব গ্রাউন্ড লেভেল বা ভূপৃষ্ঠে তেমন দেখা যাবে না বলেই অনুমান করা হচ্ছে। তবে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে মাস্ক ব্যবহার করলেই চলবে। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স কিছুটা প্রভাবিত হতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছিল।
তবে এই ধোঁয়ার মেঘের প্রভাব বায়ুমণ্ডলের নিম্ন-মধ্যম স্তরে বায়ুমণ্ডলে দেখা যাবে এবং তা ক্রমশ উপরের দিকে উঠে যাবে বলে জানানো হয়য়। এর ফলে মূলত বিমান চলাচলেই প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আকাশে ধুলো ঝড় হয়েছে বলে দেখাতে পারে।
আইএমডি-র মহাপরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর প্রভাবে মূলত শহরগুলির তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পাবে। মেঘের ক্ষেত্রে যেমন দেখা যায় তেমনই সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাবে। এটি বায়ুর গুণমানের উপর প্রভাব ফেলবে কিনা তা স্পষ্ট নয়, তবে এটি বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে রয়েছে তাই আমরা ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি উল্লেখযোগ্য প্রভাব দেখতে পাব না বলেই অনুমান করা হচ্ছে। এর ফলে আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন বা মেঘলা আকাশ দেখাবে। এর প্রভাব কয়েক ঘণ্টার জন্য থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে কারণ এরপর এটি আরও পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকবে।’
মুম্বাই ও দিল্লির ক্ষেত্রে বিমান চলাচলে বিলম্ব দেখা দিতে পারে এবং বিমান পরিষেবা বাতিল হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়েও আগাম জানানো হয়েছিল। পরিস্থিতির উপর নজর রেখে বিমান সংস্থাগুলির উদ্দেশ্যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল যাতে পথ পরিবর্তন, সে ক্ষেত্রে কতটা অতিরিক্ত জ্বালানি প্রয়োজন হতে পারে সে সম্পর্কে তৈরি থাকা যায়।
এরপর একাধিক বিমান সংস্থারও তরফে যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বিবৃতি জারি করে ফ্লাইট ক্যান্সেল বা বিলবমের বিষয়ে জানানো হয়।
হিন্দুস্তান টাইমস-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনুমান মেনেই সোমবার সন্ধ্যায় ওই ছাইয়ের মেঘ গুজরাত অঞ্চলে প্রবেশ করে দিল্লির দিকে চলে যায়।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ছাইয়ের মেঘ লোহিত সাগর পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার দিকে অগ্রসর হওয়ার পর দুপুর থেকেই বিমান সংস্থাগুলো ফ্লাইট বাতিল করতে শুরু করে। ইন্ডিগোকে তাদের ছয়টি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়। এই ফ্লাইটগুলোর মধ্যে একটি মুম্বাই থেকে আসছিল এবং যে বিমানটি বাতিল হয়, সেটি দক্ষিণ ভারত থেকে সফর শুরু করেছিল।’
মুম্বই বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক বিমান পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করে 'ডাইভার্ট' করা হচ্ছে। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়।
ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘পাকিস্তানের আকাশসীমা ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য বন্ধ। তাই ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলো প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’
যাত্রীদের নিরাপত্তার ওপর জোর দিয়ে এয়ার ইন্ডিয়াও একটি বিবৃতি জারি করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইথিওপিয়ায় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর কিছু ভৌগলিক অঞ্চলে ছাইয়ের মেঘ দেখা গিয়েছে। আমরা নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং আমাদের অপারেশনাল ক্র্যু-এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আমাদের যাত্রী, ক্রু এবং বিমানের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমাদের কাছে এটির অগ্রাধিকার শীর্ষপর্যায়ে। আমাদের নেটওয়ার্কের গ্রাউন্ড টিমগুলি যাত্রীদের সাহায্যের কাজ অব্যাহত রাখবে এবং তাদের ফ্লাইট সম্পর্কে আপডেট দেবে।’
ইথিওপিয়ায় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সম্ভাব্য পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবেলা করার জন্য ভারতের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডায়রেক্টরেট জেনারল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন-এর পক্ষ থেকে বিমান সংস্থা ও বিমানবন্দরগুলোর উদ্দেশ্যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল।
আকাশ এয়ার, ইন্ডিগো এবং কেএলএমের মতো একাধিক বিমান সংস্থা ছাইয়ের মেঘের কারণে সোমবার বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল করে দেয়। আকাসা এয়ার ২৪-২৫ নভেম্বর জেদ্দা, কুয়েত এবং আবুধাবিতে পরিষেবা স্থগিত করেছে। আরও বেশ কয়েকটি ফ্লাইটের গতিপথ পরিবর্তন করা হয়।
এর প্রভাব মঙ্গলবারও দেখা যায়। হায়দ্রাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের পক্ষ থেকে যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বিবৃতি জারি করে বলা হয় ইথিওপিয়ার আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্নুৎপাতের ফলে তৈরি ধোঁয়ার মেঘের বিমান চলাচলকে প্রভাবিত করতে পারে। একাধিক আন্তর্জাতিক বিমান বিলম্ব করা হয়েছে।
মুম্বাই, নয়াদিল্লি এবং কলকাতায় অবস্থিত আইএমডি দফতর মঙ্গলবারও তীব্র আবহাওয়ার সঙ্ক্রান্ত অ্যাডভাইজরি জারি করেছে। বিমানবন্দরগুলিকে টুলুস ভলক্যানিক অ্যাশ অ্যাডভাইজরি সেন্টার (ভিএএসি) দ্বারা চিহ্নিত নির্দিষ্ট আকাশসীমা এবং ফ্লাইট লেভেল এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। তবে পরিস্থিতির ক্রমে পরিবর্তন হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
আইএমডি-র মহাপরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন যে ছাইয়ের ওই ঘন মেঘ ক্রমে চীনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অনুমান করা হচ্ছে মঙ্গলবারই এটি ভারত থেকে সরে যাবে। আইএমডি-র তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ ওই মেঘ ভারত থেকে চলে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিবিসি বাংলা
ইথিওপিয়ার আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের প্রভাবে ভারতে ভয়াবহ ফ্লাইট বিপর্যয়
৫ বছর পর ভারত-চীন সরাসরি ফ্লাইট চালু
৩০ বছরের পর ফের চালু হচ্ছে সোমালি এয়ারলাইন্স
মাঝ আকাশে যান্ত্রিক ত্রুটি: ১৬০ যাত্রী নিয়ে চেন্নাই ফিরল দুবাইগামী বিমান
৪৩৬ সিটের তৃতীয় এয়ারবাস যুক্ত, ইউএস-বাংলার বহরে এখন ২৫টি এয়ারক্রাফট
৩০০ এজেন্ট নিয়ে ইউএস-বাংলার ‘পার্টনার রিট্রিট মালদ্বীপ-২০২৫’
কক্সবাজার রুটে রাত্রিকালীন ফ্লাইট চালু করলো এয়ার এ্যাস্ট্রা