শক্রবার ২৮ নভেম্বার ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
অবকাশ

পর্দা নামল ১২তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারের, আঞ্চলিক পর্যটন সহযোগিতায় নতুন প্রত্যয়

বার্তা ডেস্ক ২৩ সেপ্টেম্বার ২০২৫ ০১:১২ এ.এম

১২তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার

তিন দিনব্যাপী ১২তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার (এটিএফ) ২০২৫-এর পর্দা নামল (২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫) আজ। ঢাকার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত এই মেলা শুরু হয়েছিল ১৮ সেপ্টেম্বর। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় এই আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও নুজহাত ইয়াসমিন, বাংলাদেশে নিযুক্ত মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত শিউনিন রশিদ ও ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত নিনা পি. কেইংলেট।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান বলেন, এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারের তিন দিনব্যাপী এই আয়োজন শুধু একটি মেলা ছিল না—এটি ছিল একটি মঞ্চ, যেখানে বাংলাদেশ ও এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্ব, সংস্কৃতি এবং সম্ভাবনার বিনিময় হয়েছে। এত সুন্দর ও সুচারুভাবে মেলাটি আয়োজন করার জন্য প্রথমেই আমি আয়োজক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে এটিএফ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হেলালসহ পুরো টিমকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, জনসংখ্যাবহুল এই দেশ এখন আর পিছিয়ে পড়া কোনো গন্তব্য নয়। আমরা আমাদের পর্যটন খাতকে নতুনভাবে গড়ে তুলছি—ইকো-ট্যুরিজম, হেরিটেজ ট্যুরিজম, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম থেকে শুরু করে কমিউনিটি বেইজড ইনিশিয়েটিভ এবং বিনিয়োগ-বান্ধব হসপিটালিটি সেক্টর—সর্বত্র আমাদের অগ্রযাত্রা দৃশ্যমান। এই ফেয়ারের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে আমরা আমাদের সম্ভাবনার বার্তা পৌঁছে দিতে পেরেছি। আমাদের মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ সকলেই এই উদ্যোগকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। ভবিষ্যতের পর্যটনকে আরো উজ্জ্বল, নিরাপদ ও প্রাণবন্ত করার লক্ষ্যে আসুন, আমরা একসাথে এগিয়ে যাই।

এটিএফ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হেলাল সমাপনী বক্তব্যে বলেন, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা অত্যন্ত সাফল্যের সাথে ১২তম এটিএফ আয়োজন করতে পেরেছি। এটি সম্ভব হয়েছে সবার সহায়তা, উৎসাহ ও ভালোবাসার কারণে। বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় আজ এটিএফ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী পর্যটন মেলায় পরিণত হয়েছে। এটি শুধু একটি ট্র্যাভেল ট্রেড ফেয়ার নয়—এটি একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে
পর্যটন উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে, কমিউনিটি ভিত্তিক পর্যটনকে প্রমোট করার সুয়োগ হয়েছে, শিশুদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, সেমিনার, বিটুবি নেটওয়ার্কিং ও জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, এই বছর ৭টি দেশের প্রায় ১৫০টি এক্সহিবিটর অংশগ্রহণ করেছে—যা এটিএফ ২০২৫-কে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রাণবন্ত ও সাফল্যমণ্ডিত করেছে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন-এর প্রতি, তাদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য।

সবশেষে তিনি বলেন, আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এটিএফকে একটি আঞ্চলিক পর্যটন হাবে পরিণত করেছে, যেখানে গড়ে উঠেছে অংশীদারিত্ব, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, এবং দেশীয়-আন্তর্জাতিক পর্যটন স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সংযোগ।

পাশাপাশি তিনি আগামী ২০২৬ সালের এটিএফ আয়োজনের তারিখ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, বিশ্ব পর্যটন দিবসের উদযাপনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আগামী ১৩তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার অনুষ্ঠিত হবে ২৪–২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৬। আগামী বছর মেলাটি আরও বৃহৎ পরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে এশীয় পর্যটনের একত্রিত ভবিষ্যৎ এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক পর্যটন সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

মেলায় সাতটি দেশের প্রায় ১৫০টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে ছিল সরকারি পর্যটন সংস্থা, বেসরকারি কোম্পানি, এয়ারলাইনস, হোটেল, ট্যুর অপারেটর, ক্রুজ কোম্পানি এবং ট্রাভেল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন। হাজার হাজার দর্শনার্থী মেলায় অংশ নিয়ে স্টল ঘুরে দেখেন, নেটওয়ার্কিং সেশনে অংশ নেন, সেমিনারে যোগ দেন এবং মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করেন।

এবারের ফেয়ারে নেপাল ছিল প্রাইম পার্টনার কান্ট্রি, যারা তাদের হিমালয়ান ঐতিহ্য, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরে। ফিলিপাইন ও মালদ্বীপ পার্টনার কান্ট্রি হিসেবে অংশ নেয়, তাদের বৈচিত্র্যময় পর্যটন পণ্য এবং বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার অঙ্গীকার নিয়ে।